কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
# ২ মাসে ৫ রোহিঙ্গার মৃত্যু
# বন্ধ রয়েছে পৌরসভার মশক নিধন
# সচেতনতা জরুরি – সিভিল সার্জন
ডেঙ্গুর হটস্পট হতে চলেছে কক্সবাজার। প্রতিদিনই বাড়ছে কক্সবাজারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন তেমন পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত নেয়নি। ডেঙ্গু মোকাবেলায় কোন কর্মসূচিও চোখে পড়ছেনা। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দ্রুত সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু সময়ের দাবি ।
কক্সবাজারে (গতকাল ১১ সেপ্ট্ম্বর) ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৭০ জন। এরমধ্যে রোহিঙ্গা রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৫৮৫ জন এবং স্থানীয় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৭৮৫ জন। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। প্রতিরোধে এবার তেমন সচেতনতা মূলক কার্যক্রম ও দেখা যাচ্ছেনা। কক্সবাজার পৌরসভা এবং সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। পৌরসভার মশক নিধন অভিযান এবং পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদার করা না গেলে ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হবে কক্সবাজার এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা সদর হাসপাতাল সূত্র জানিযেছে- ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার্থে জেলা সদর হাসপাতালে খোলা হয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্যানেল। সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন উক্ত প্যানেল। রাখা হয়েছে বিনা ফি’তে ডেঙ্গু পরীক্ষার সুবিধাও।
সিভিল সার্জন অফিসের ডেঙ্গু সেলের দায়িত্বরত চিকিৎসক শাহ ফাহিম আহমেদ ফয়সাল জানান – কক্সবাজারের হোস্ট কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। ইতিমধ্যে জুন থেকে গতকাল পর্যন্ত ৪২২৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৭৯৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রুগী রয়েছে। তাদেরকে জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য ক্লিনিক এবং বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও কক্সবাজার সদর, কক্সবাজার পৌরসভা, উখিয়া এবং টেকনাফে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গতকাল স্থানীয় ৭১ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে বেশিরভাগই কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় সদর হাসপাতালে নতুন করে ৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি করা হয়েছে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে- জেলায় গত জুন মাসে ৩৩৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। এরমধ্যে স্থানীয় ৫৫ জন এবং রোহিঙ্গা ২৭৯ জন। জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় ৯৬৫ জন এরমধ্যে স্থানীয় ৪৮৫ জন এবং রোহিঙ্গা ৪৮০ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে জুলাই মাসে দুজন রোহিঙ্গা। গত আগস্ট মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগস্ট মাসে ৪২৪৭ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করা হয়েছে এর মধ্যে ১৪৪৮ জন স্থানীয় এবং ২৭৯৯ জন রোহিঙ্গা রোগী রয়েছে। গত মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনজন রোহিঙ্গা মৃত্যুবরণ করেছে বলে সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে। গত মাসের চেয়ে চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন অফিস।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাক্তার আসিফ আহমেদ হাওলাদার জানান- ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো অসচেতনতা। ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখা, বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখা, ড্রেন পরিষ্কার রাখা, বাড়ির আশেপাশে যেখানে ময়লা জমে রয়েছে এবং পানি জমে রয়েছে সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে মশার লার্ভা জমে থাকে সে স্থানগুলো ধ্বংস করে ফেলা খুবই জরুরী।
এছাড়া কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত মশক নিধন অভিযান, পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে। মশার বিস্তার কমে আসলে এমনিতেই ডেঙ্গু আক্রান্ত কমে যাবে। তিনি কক্সবাজারবাসিকে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়েও সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
পাঠকের মতামত: